সরকারি নার্সিং পড়াশোনা ও ভর্তি তথ্য
সরকারি নার্সিং পড়াশোনা ও ভর্তি তথ্য : নার্সিং এমন একটি পেশা যা সাধারণ জনগণের স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত। এ পেশার মাধ্যমে ব্যক্তিগত, পারিবারিক কিংবা সামাজিকভাবে কোন রোগী বা ব্যক্তির স্বাস্থ্য পুণরুদ্ধার এবং জীবনযাত্রার গুরুত্বতা তুলে ধরা হয়। এ পেশার সাথে সম্পৃক্ত, দক্ষ কিংবা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তি নার্স বা সেবিকা নামে পরিচিত। প্রধানতঃ নারীরাই নার্সিং পেশার সাথে জড়িত থাকেন। তবে এখন অনেক পুুুরুষেও এই পেষার সাথে যুুুুক্ত হচ্ছেন। আমরা আমাদের চারপাশে লক্ষ্য করলেই দেখতে পাবো নারীদের পাশাপাশি আজকাল অনেক পুরুষদের এই পেশায় আগমন ঘটছে।তাই বলা যায়,নার্সিং পেশা এখন শুধুমাত্র নারীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই।
আজকে আমরা নার্সিংয়ের সাথে সম্পৃক্ত সকল বিষয়ে সম্পর্কে অবগত হবো।যার ফলে আপনারা খুব সহজেই নার্সিং পেশা সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন।তবে আলোচনার মূল বিষয় হবে নার্সিংয়ে পড়াশোনা ও ভর্তি নিয়ে।
নার্সিং পেশা হিসেবে কেমন?
পেশা হিসেবে নার্সিংয়ের কোন তুলনা হয় না।অবশ্যই পেশা হিসেবে নার্সিং ভালো। কারণ নার্সিং এমন একটি পেশা, যেখানে খুব কাছে থেকে মানুষের সেবা করা যায়। অসুস্থ অবস্থায় যখন একজন রোগী হাসপাতালে আসেন, তখন নার্স দের সেবা-শুশ্রূষায় রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন। বর্তমানে নার্সিংয়ে অনেক সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান।দেশ ও দেশের বাইরে নার্সদের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বর্তমানে যে কেউ নার্সিং কোর্স শেষ করার পর খুব সহজে চাকরি পেয়ে যেতে পারেন।কারন দেশে নার্সিংয়ে অনেক কাজের ক্ষেত্র আছে।
সরকারি নার্সিং পড়াশোনা ও ভর্তি তথ্য ২০২২
একজন নার্স বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতে পারেন। যেমনঃসরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে,বেসরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে,আইনশৃঙ্খলা ও সামরিক বাহিনীর চিকিৎসা বিভাগে, এবং ব্যক্তিগত ক্লিনিকে। কেউ যদি সরকারি চাকরি না-ও পায়,তাহলে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, নার্সিং কলেজ ও বিভিন্ন ইনস্টিটিউটে কাজ করার সুযোগ থাকে। বেকার বসে থাকার সুযোগ একদম নেই বললেই চলে।তাছাড়া বিদেশে কাজ করা এবং উচ্চশিক্ষার সুযোগও রয়েছে।সেক্ষেত্রে বলা যায় যে নার্সিং একটি যুগোপযোগী ও মানসম্মত পেশা।
বাংলাদেশে নার্সিং পড়াশোনার ধাপগুলো কী কী?
বাংলাদেশে নার্সিংয়ে পড়াশোনা করার জন্য বিভিন্ন ধাপ রয়েছে। যেমন: ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি (৩ বছর) ও ৬ মাস ইন্টার্নশিপ, বিএসসি ইন নার্সিং (৪ বছর) ও ৬ মাস ইন্টার্নশিপ, মাস্টার অব সায়েন্স ইন নার্সিং (২ বছর)। ২০০৮ সাল থেকে শুরু হয়েছে বিএসসি ইন নার্সিং। আবার বিএসসি ইন নার্সিংয়ের দুটি ধাপ আছে।
১. বিএসসি ইন নার্সিং (৪ বছর)। এইচএসসি পাস করে সরাসরি করা যায়। তারপর এমএসসি ইন নার্সিং (২ বছর), এমপিএইচ ও অন্যান্য বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করতে পারবেন।
২. পোস্ট বেসিক বিএসসি ইন নার্সিং (২ বছর)। যারা ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি (৩ বছর) সম্পন্ন করে তারা এটি করতে পারেন। তারপর এমএসএন, এমপিএইচ ও অন্যান্য বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করতে পারবেন।
শিক্ষাগত যোগ্যতা কেমন লাগে নার্সিং করার জন্য?
ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কোর্স করার জন্য এসএসসি এবং এইচএসসি সনদ লাগে। তাছাড়া যে কোনো বিভাগ থেকে কোর্সটি করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে এসএসসি ও এইচএসসি উভয় মিলে ৬.০০ সর্বনিম্ন থাকতে হয়। আর বিএসসি ইন নার্সিং কোর্সটি শুধু বিজ্ঞান বিভাগ থেকে করা যায়। সে ক্ষেত্রে এসএসসি ও এইচএসসি উভয় মিলে ৭.০০ সর্বনিম্ন এবং আলাদাভাবে জীববিজ্ঞান বিষয়ে ৩.০০ পয়েন্ট থাকতে হয়।
নার্সিং করার জন্য কোথায় কোথায় ভর্তি হওয়া যায়?
নার্সিং পড়ার জন্য বাংলাদেশে সরকারিভাবে সবমিলিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ ছাড়াও বেসরকারি অনেক নার্সিং কলেজ ও ইনস্টিটিউট রয়েছে যেগুলোতে আমরা অনেক ভালোভাবে নার্সিং কোর্স করতে পারি। ঢাকায় জাতীয় নার্সিং উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আছে, সেখান থেকে এমএসসি নার্সিং কোর্স করা যায়।নার্সিং কোর্সসমূহ করার জন্য অবশ্যই ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। সাধারণত নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর, বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল (বিএনএমসি) ও সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় পত্রিকা ও ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে থাকে।তারপর অনলাইনে ফরম পূরণ ও প্রবেশপত্র ডাউনলোড করতে হয়।
ভর্তি পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষা হয়। সারাদেশে একযোগে ভর্তি পরীক্ষা হয়ে থাকে। এরপর মেধাক্রম ও পছন্দ অনুযায়ী সরকারি নার্সিং কলেজের নির্ধারিত আসনে ভর্তি হতে হয়।কেউ সরকারিতে চান্স না পেলে বেসরকারি কলেজ ও বিভিন্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি হওয়ার সুযোগ থাকে। তাছাড়া সরকারি নার্সিং কলেজে পড়ার জন্য তেমন টাকা লাগে না।যা আমাদের জন্য খুবই কার্যকরী একটি বিষয়। শুধু ভর্তির সময় নির্ধারিত ফি ও পরীক্ষার ফি দিতে হয়। তাছাড়া এখানে শিক্ষার্থীদের প্রতিমাসে মাসিক বৃত্তি দেওয়া হয়। তবে বেসরকারি পর্যায়ের কলেজ ও ইনস্টিটিউটগুলোয় খরচ প্রতিষ্ঠানভেদে একটু কমবেশি হয়ে থাকে।
দেশে নার্সিংয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ-সুবিধা
বাংলাদেশে নার্সিং পেশাটি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগে সুযোগ-সুবিধা কিছুটা কম থাকলেও বর্তমানে উচ্চশিক্ষার অনেক সুযোগ আছে। আগে স্নাতকোত্তর করার জন্য কোনো নার্সিং কলেজ ছিল না। বর্তমানে জাতীয় নার্সিং উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (নিয়ানার), কুমুদিনী নার্সিং কলেজ থেকে এমএসসি নার্সিং কোর্স করা যায়। সম্প্রতি সরকারিভাবে উচ্চশিক্ষার জন্য আরও নয়টি কলেজ ও বেসরকারি পর্যায়ে অনেক নার্সিং কলেজে এমএসসি কোর্স চালু করার প্রশাসনিক অনুমোদন হয়েছে।
নার্সিংয়ে জাতীয় নার্সিং উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (নিয়ানার) মাস্টার্স করার পাশাপাশি নার্সরা বিএসএমএমইউর অধীনে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন (নিপসম) থেকেও সরকারিভাবে পাবলিক হেলথের ওপর চারটি বিষয়ে মাস্টার্স করা সম্ভব। নিপসমই শুধু এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যেখান থেকে ডাক্তার এবং নার্স একই সাথে একই ক্লাসরুম শেয়ার করার সুযোগ পেয়ে থাকে। তাছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নার্সিং সংশ্লিষ্ট কিছু বিষয়ে নার্সরা তাদের স্নাতকোত্তর করার সুযোগ পায়। জেরোন্টোলজি অ্যান্ড জেরিয়াট্রিক ওয়েলফেয়ার, ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড সোশ্যাল ওয়ার্ক, ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। বর্তমানের সাথে তাল মিলিয়ে এ বিষয়গুলোর চাহিদা দেশে-বিদেশে সমান হারে বাড়ছে।
বিদেশে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার সুযোগ
বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য নার্সদের অনেক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। সাধারণত শিক্ষার্থীরা এমএসসি, পিএইচডি ও অন্যান্য ডিগ্রি নিতে বিদেশ যায়। বিদেশে পড়ার ক্ষেত্রে যে দেশে যাবেন, সে দেশের প্রতিষ্ঠানের শর্ত পূরণের মাধ্যমে স্কলারশিপ নিয়ে যেতে পারবেন। তা ছাড়া বিভিন্ন কলেজে স্কলারশিপ দিলে শর্ত পূরণের মাধ্যমে সরকারিভাবেও উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ যাওয়া য়ায়। বর্তমানে বাংলাদেশিরা যুক্তরাজ্য, কানাডা, থাইল্যান্ড, কোরিয়া ও চীনকে উচ্চশিক্ষার জন্য বেশি বেছে নিচ্ছে বলা যায়।
স্বাস্থ্যখাতে নার্সদের ভূমিকা
স্বাস্থ্যখাতে নার্সদের ভূমিকা নিঃসন্দেহে অনেক। আমাদের দেশে হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারের চেয়ে রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। তারপরও নার্সরা সার্বক্ষণিক রোগীদের পাশে থাকেন। তাদের সেবা দিয়ে সুস্থ করে তোলেন। এমনকি কেউ দুর্গম এলাকায় কোনো হাসপাতালে গেলে, সেখানে কাউকে না পেলেও কিন্তু একজন নার্সকে পাওয়া যায়।আগে নার্সরা ৩য় শ্রেণির কর্মকতা ছিলেন। বর্তমান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার নার্সিং পেশাকে ২য় শ্রেণিতে উন্নীত করেছে। তা ছাড়া ১ম শ্রেণিতে প্রমোশনের সুযোগ রয়েছে। শিক্ষার মানও আগের থেকে উন্নত করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে মূল্যায়নটা আগের চেয়ে বেড়েছে। তবে এখনো কিছু কিছু জায়গায় নার্সদের সামাজিকভাবে অন্য চোখে দেখা হয়। অনেকে ভালোভাবে নিতে চান না। কিন্তু নার্সরা যে সমাজে কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ, তা সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।তাই আমাদের সবার নার্সদের সম্মান করতে হবে এবং আন্তরিকভাবে গ্রহণ করতে হবে।
একজন নার্সের বেতন কেমন থাকে?
একজন নার্সের বেতন নানা রকম হতে পারে।সেটা সম্পূর্ণ তার কর্মক্ষেত্রের উপর নির্ভরশীল।কারন কেউ যদি সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকে তাহলে অবশ্যই সে ভালো বেতন পাবে।তাছাড়া নানা রকম সুযোগ সুবিধাও পেয়ে থাকবে।আবার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সুযোগ সুবিধা তূলনামূলক কম থাকে।তবে সব ক্ষেত্রেই বেতন ১০ হাজার থেকে ২০ হাজারের ভিতরে হয়ে থাকে।
নার্স এর কাজ কি?
একজন নার্স নানারকম কাজ করে থাকে।হাসপাতালে বা ক্লিনিকে বিভিন্ন কাজের সাথে তার সম্পৃক্ত হতে হয়।রোগীকে সেবা প্রদান করা থেকে শুরু করে ডাক্তারকে বিভিন্ন কাজে সহযোগীতা করা পর্যন্ত নার্সরা কাজ করে থাকে।রোগীদের অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যেতেও নার্স সাহায্য করে থাকে।তাছাড়া রোগীদের কোন সময় কি দরকার সেদিকেও তাদের লক্ষ্য রাখতে হয়।নার্সিংয়ে ভালো ক্যারিয়ার গঠনের সুযোগ আছে। আগে সুযোগ-সুবিধা কম থাকলেও বর্তমানে দেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ আছে। তা ছাড়া বর্তমানে নার্সিং পেশায় প্রচুর কর্মক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। দিন দিন হাসপাতালের সংখ্যা বাড়ছে। সেইসাথে দেশ ও দেশের বাইরে কাজের চাহিদা বাড়ছে। নার্সিং একটি আন্তর্জাতিক মানের ভার্সেটাইল পেশা। এ বিষয়ে পড়ে যে কেউ যেমন নার্স হওয়া যা, পাশাপাশি অন্য পেশায়ও সুইচ করতে পারা যায়। কেউ যদি গ্রাজুয়েট নার্স হয়, তিনি চাইলেই জেনারেল বিসিএস দিয়ে একজন ১ম শ্রেণির গেজেটেড অফিসার হতে পারবে।
Government Nursing Admission Information
►► আরো দেখো: এসএসসি ১৪তম সপ্তাহের রসায়ন অ্যাসাইনমেন্ট ২০২২
►► আরো দেখো: ইংরেজি বা বাংলা হাতের লেখা সুন্দর করার কৌশল
আবার একজন পুলিশের এসআই এবং ব্যাংকের এক্স ক্যাডার নার্সিং অফিসার হতে পারবে। তখন কর্মক্ষেত্র হবে বিশাল। কেউ চাইলে ফাইভ স্টার হোটেল ও গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিতে ভূমিকা রাখতে পারবে। বাংলাদেশে থেকেও আকাশ ছোঁয়া বেতন পাওয়া যায় আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোয় যোগদান করে। এ ছাড়া যোগদান করা যায় বিভিন্ন দূতাবাসে, যেখানে আছে উন্নত সব সুযোগ-সুবিধা। তাই বলা যায়, তরুণরা নার্সিং পেশায় আসলে খুব ভালো হবে। এবং দেশ ও মানব সেবাসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নের কাজে এগিয়ে আসবে।